Santalijagat

Santal Pargana Dishom Talate

পশ্চিমবঙ্গে ভুয়া ST সনদ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ – প্রকৃত আদিবাসীদের জন্য বড় সিদ্ধান্ত

পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভুয়া ST সনদ রোধে কড়া নির্দেশ দিলেন। প্রকৃত আদিবাসীদের জমি ও পট্টা বন্টন, Ol Chiki লিপির সম্মান ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিয়ে বিস্তারিত জানুন।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৬ আগস্ট ২০২৫ তারিখে রাজ্যের প্রশাসনকে নির্দেশ দেন ভুয়া ST (Scheduled Tribe) সনদ বিতরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছিল, রাজ্যে বহু অ-আদিবাসী ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ST সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছেন এবং এর মাধ্যমে শিক্ষা ও চাকরির সংরক্ষিত সুযোগ ভোগ করছেন।

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি প্রধান সচিব মনোজ পান্ত-কে দায়িত্ব দেন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এবং প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নিতে।

নির্দেশনার মূল দিক

ভুয়া সনদ চিহ্নিতকরণ:জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, সমস্ত ST সনদ যাচাই করতে হবে। যাদের সনদ ভুয়া, তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।

আদিবাসীদের জমি ও পট্টা:মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে প্রকৃত আদিবাসীদের দ্রুত জমি ও পট্টা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে তারা ন্যায্য অধিকার পান।

Ol Chiki লিপির সম্মান:সাঁওতালি ভাষার সরকারি লিপি Ol Chiki সম্প্রতি কিছু পরীক্ষায় বাদ পড়ায় মুখ্যমন্ত্রী তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ভবিষ্যতে রাজ্যের সব পরীক্ষায় Ol Chiki ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক প্রভাব

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তৃণমূল সরকার আদিবাসী ভোটব্যাংককে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। রাজ্যের প্রায় সব বড় নির্বাচনে আদিবাসী সমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভুয়া সনদ বাতিলের পদক্ষেপ দেখিয়ে সরকার প্রমাণ করতে চাইছে যে তারা প্রকৃত আদিবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।অন্যদিকে বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া সনদ ইস্যুতে সরকারকে আক্রমণ করছিল। এবার মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে সেই চাপ অনেকটাই কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আদিবাসী সমাজের প্রতিক্রিয়া

আদিবাসী সমাজ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে—

  • ভুয়া সনদ বাতিল হলে শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ বঞ্চিত না হয়ে প্রকৃত আদিবাসীরা সুবিধা পাবে।
  • Ol Chiki লিপি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য তাদের সংস্কৃতির মর্যাদা রক্ষার বড় বিজয়।জমি ও পট্টা বিতরণের ঘোষণা গ্রামীণ আদিবাসীদের জীবনে বড় স্বস্তি আনতে পারে।

তবে অনেকেই বলছেন, সরকারের ঘোষণার চেয়ে বাস্তবায়ন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভুয়া সনদ চিহ্নিত করতে যথেষ্ট সময় ও প্রশাসনিক দক্ষতা প্রয়োজন।

চ্যালেঞ্জ সামনে

  • প্রমাণ সংগ্রহ: ভুয়া সনদ প্রমাণ করা কঠিন কাজ। সঠিক নথি যাচাই ছাড়া দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।
  • রাজনৈতিক প্রভাব: ভুয়া সনদধারীদের মধ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তিও থাকতে পারেন। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কতটা দৃঢ় হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন।
  • বাস্তবায়ন: জমি ও পট্টা বিতরণের প্রতিশ্রুতি কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবে কতটা কার্যকর হয়, তা সময়ই বলে দেবে।

উপসংহার

পশ্চিমবঙ্গে ভুয়া ST সনদ ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা আদিবাসী সমাজের মধ্যে আস্থা বাড়িয়েছে। রাজনৈতিকভাবে এটি তৃণমূল সরকারের জন্য ইতিবাচক বার্তা হলেও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এক কথায়, এই সিদ্ধান্ত প্রকৃত আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় বড় পদক্ষেপ, তবে এর বাস্তব সাফল্য নির্ভর করবে প্রশাসনের উপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *